ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ , ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে চিকিৎসা বন্ধ পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধির রেকর্ড ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু গাজীপুরে উদ্ধার মাগুরার সেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ডাক্তার দেখাতে না পেরে রোগীদের বিক্ষোভ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিমুখী চিকিৎসকদের পদযাত্রায় বাধা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলো পুলিশ যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা শিক্ষকদের পুলিশের জলকামান-লাঠিচার্জ এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না আজ সারাদেশে ২ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ডাক ইসি কর্মীদের ওআইসিভুক্ত মিশন প্রধানদের কাছে ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরবেন সিইসি প্রক্সি ভোটে বড় সংশয় ‘বিশ্বাস’ পুলিশের জন্য বিপুলসংখ্যক গাড়ি কেনার উদ্যোগ ১৫ বছরের নিচে কেউ হজে যেতে পারবে না আবাসন ব্যবসায়ীদের দুর্দিন কাটছে না যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইউক্রেন আলোচনায় বসবো না যা ইচ্ছা করুন মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে কিল সুইচ
ধ্বংসস্তূপে পরিণত ধানমন্ডি ৩২

ভাঙচুর আগুন বিক্ষুব্ধদের

  • আপলোড সময় : ০৭-০২-২০২৫ ০৭:০৬:৫০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৭-০২-২০২৫ ০৭:০৬:৫০ অপরাহ্ন
ভাঙচুর আগুন বিক্ষুব্ধদের
* শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যে মুজিবের বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত, দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়
* বিভিন্ন জেলায় শেখ পরিবারসহ একাধিক আওয়ামী লীগের এমপি’র বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন


ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ম্যুরাল ভাঙচুর, আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ও আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। খুলনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি ‘শেখ বাড়ি’ ভাঙার মধ্য দিয়ে ঢাকার বাইরে এ ধরনের হামলা হয়েছে। রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যে জেরে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার বুলডোজার কর্মসূচিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গত বুধবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়িটি ভেঙ্গে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষুব্ধ শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপ ঘিরে অবস্থান করে। তাদেরকে দলবদ্ধ হয়ে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে উৎসব করতে দেখা গেছে। এসময় তাদেরকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়। এসময় ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, পুলিশ বা দমকল বাহিনীর কাউকেই দেখা যায়নি। এক রাতেই পাল্টে গেল ঢাকায় শেখ মুজিবের ৩২ নম্বর ও হাসিনার সুধাসদনের চিত্র।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভাঙার কাজে ব্যবহার করা বুলডোজরটি সরিয়ে প্রধান সড়কে রাখা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের অনেককে বাড়ি ভাঙার কাজে অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদের হাতে হাতুড়ি, লাঠিসহ বিভিন্ন হালকা যন্ত্র দেখা গেছে। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ভাঙার কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আবার অন্যদিকে ভাঙা দেয়ালে বিক্ষুব্ধদের কেউ কেউ রঙ-তুলি দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান লিখে দিচ্ছেন।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানায়, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের বিকেলেও ওই বাড়ির পাঁচটি বসতঘর ও দু’টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের রাজাপুর গ্রামের বাড়ির দ্বিতল ভবন প্রথমে ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা। এ সময় ‘কাউয়া কাউয়া’, ‘কাউয়া কাদের’ সহ নানা স্লোগান দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে একটার দিকে উপজেলার বসুরহাট বাজার থেকে একটি মিছিল বের করেন ছাত্র-জনতা। মিছিলটি বসুরহাট বাসস্ট্যান্ড হয়ে কাদেরের বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে থাকা ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার দোতালা ভবন হাতুড়ি, শাবল দিয়ে ভাঙা হয়। পরে তার ছোট ভাই শাহাদাত মির্জার ভবনও ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা এমরান হোসেন জানান, গত ৫ আগস্টের দিন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর মাত্র কিছু দিন আগে কাদের মির্জা ভবনটি পুনরায় সংস্কার করেন। দ্বিতীয় দফায় কাদেরের বাড়িতে এ অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। তবে হামলা-ভাঙচুরের সময় তাদের পরিবারের কেউ ছিল না। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর কাদেরের পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছে।
ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা শাখার সমন্বয়ক মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা কোম্পানীগঞ্জের অসংখ্য মানুষ ওবায়দুল কাদের ও তার ভাই আব্দুল কাদের মির্জার ও তার বাহিনীর লোকদের দ্বারা অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব কারণে তাদের প্রতি যে ক্ষোভ জমেছিল, আজকের হামলা ভাঙচুর ওই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এই হামলা ভাঙচুরে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতেও যদি কোনো সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে ফ্যাসিস্টের আচরণ করেন, তাদের পরিণতিও একই রকম হবে। অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিমের মোবাইলে কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য মেলেনি।
খুলনা প্রতিনিধি জানায়, খুলনা নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ‘শেখ বাড়ি’র একটি অংশ এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত বুধবার রাত নয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে ওই ভাঙচুর শুরু করেন। রাতভর দু’টি এক্সকাভেটর চালিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক, দেয়ালসহ বেশির ভাগ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ আবু নাসেরের। এ বাড়িতে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বিসিবির সাবেক পরিচালক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শেখ সোহেল উদ্দিনসহ তার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন। মূলত ওই বাড়ি থেকেই পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো। গত বছরের ৪ আগস্ট প্রথম দফায় বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল ছাত্র-জনতা। সেদিন বাড়িতে কেউ ছিলেন না। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। দরজা, জানালা থেকে শুরু করে কোনো কিছুই ছিল না। ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বাড়িটিতে শুধু ইটপাথরের কাঠামোই অবশিষ্ট ছিল। গত বুধবার রাতেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটিও এক্সকাভেটর দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানায়, কুষ্টিয়ায় এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-তিন (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ির একটি অংশ। গতকাল রাত ১০টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কে তিনতলা বাড়িটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ভাঙা শুরু হয়। এর আগে গত ৪ আগস্ট ও ৫ আগস্ট এই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, একটি এক্সকাভেটর নিয়ে প্রথমে বাড়ির প্রধান ফটক ও সীমানাপ্রাচীর গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় ছাত্র-জনতা স্লোগান দিতে থাকে ‘স্বৈরাচারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’। এ সময় বাড়ির সামনে অনেকেই ভিড় করে। এর আগে উপজেলা মোড় থেকে একটি মশাল মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা হানিফের বাড়ির সামনে আসে। রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল থেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম মুছে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর আগে রাত নয়টার দিকে ক্যাম্পাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙা ম্যুরালে ক্ষমতাচ্যুত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পোস্টার ঝুলিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে জুতা নিক্ষেপ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘এক্সকাভেটর মিছিল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত বুধবার রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের চারটি ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম হোসেন ও সদস্যসচিব সাফ্ফাতুল ইসলামের নেতৃত্বে গত বুধবার রাত ১০টা থেকে ছাত্র-জনতা সংগঠিত হতে থাকে। রাত ১১টায় সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে যান। এরপর সেখানে শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের দু’টি ম্যুরাল প্রথমে হাতুড়ি, শাবল ও রড দিয়ে ভাঙচুর করা হয়। দিবাগত রাত ১২টার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে তা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে পৌঁছায়। এ সময় মিছিলকারীরা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে ফেলার পাশাপাশি প্রধান ফটক, গ্রিল, নিচতলার দেয়ালের আংশিক ভেঙে দেয়া হয়। রাত একটার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল একই এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
যশোর প্রতিনিধি জানায়, যশোরে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার সাতটি ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও নামফলক ভাঙচুর করা হয়েছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা হাতুড়ি দিয়ে এসব স্থাপনা ভাঙচুর করে। এসব স্থাপনা গত বছর ৫ আগস্টের পর কমবেশি ভাঙচুর করা হয়েছিল। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ভাঙচুরের কোনো নির্দেশনা ছিল না। কারা ভাঙচুর করেছে, তা তারা জানেন না। যশোরের কেশবপুরে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ এস এস কে সাদেকের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানায়, বরিশালে গত বুধবার রাত থেকে বুলডোজার দিয়ে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বাড়ি ভাঙা শুরু হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কালীবাড়ি রোডে সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনের সামনে ভিড় জমান। রাত দেড়টার দিকে বাসভবন ঘিরে ভাঙচুরের একপর্যায়ে বুলডোজার দিয়ে বাড়ির নিচতলার একাংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। পরে তিনতলায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আজকেও বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা চলছিল। সাদিক আবদুল্লাহর বাবা সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই।
গত বুধবার রাত দুইটার দিকে বরিশাল নগরের বগুড়া রোডে আমির হোসেন আমুর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে ভাঙা শুরু হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা সকাল পর্যন্ত তিনতলা বাড়ির একতলার নিচের অংশ ভেঙেছেন।
ভোলা প্রতিনিধি জানায়, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার রাত ১২টার পর এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বাসভবনে আগুন জ্বলেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ভোলা সদরের গাজীপুর সড়কে ‘প্রিয় কুটির’ নামের ভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন একদল বিক্ষুব্ধ লোক। পরে তারা ভবনটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। তারা বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে দেয়ালে সাঁটানো বিভিন্ন ছবি, ক্রেস্ট ও কাগজপত্র রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেন। কয়েকটি ফ্যান ও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা।
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানায়, পিরোজপুরে সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল এবং তার ভাই সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। গত বুধবার রাত একটার দিকে শহরের পাড়েরহাট সড়কে এ ঘটনা ঘটে। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ ও ৬ আগস্ট বাড়ি দু’টিতে একাধিকবার আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
সিলেট প্রতিনিধি জানায়, সিলেটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙচুর হওয়া ম্যুরালটি এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে গুঁড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করে তারা। এর আগে রাত সাড়ে নয়টার দিকে নগরের কিনব্রিজ এলাকা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি বুলডোজার (হুইল এক্সকাভেটর) নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান। পরে তারা ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেয়া শুরু করেন।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচটি ম্যুরাল এবং শহরের একটি পাড়ায় থাকা একটি মাজার ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গত বুধবার রাত ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী প্রথমে পৌর ভবন চত্বরে জড়ো হন। সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এরপর শহরের ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণে গিয়ে তারা শেখ মুজিবর রহমানের আরেকটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। একে একে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা পরিষদ ও সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে থাকা ম্যুরালগুলো ভেঙে ফেলা হয়। গভীর রাতে পৌর শহরের হাছননগর এলাকায় হুসেন বখত চত্বরের দক্ষিণ পাশে থাকা ‘ডংকা শাহের মাজার’ হিসেবে পরিচিত আধা পাকা ছোট ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
রংপুর প্রতিনিধি জানায়, রংপুরে গত বুধবার রাতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দু’টিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ম্যুরাল দু’টি ভাঙচুর করেন। গত বুধবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের এক্সকাভেটর এনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এর আগে রাত সাড়ে নয়টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলক ভেঙে ফেলা হয়।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানায়, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকসিংগা মহল্লায় অবস্থিত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার মণিগ্রাম ইউনিয়নের সাফারি গ্রামে শাহরিয়ার আলমের ট্রেনিং সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ৫০ থেকে ৬০টি মোটরসাইকেলে প্রায় দেড়শ’ লোক এসে বাড়িতে হামলা চালান। স্থানীয় লোকজন এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা হুমকি দিয়ে চলে যেতে বলেন। এরপর তারা বাড়িতে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালা ভাঙচুর করে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। তারপর পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যান। আগুন লাগানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভাতে শুরু করেন। প্রায় একই সময়ে পুলিশ চলে আসে। তখন দেখা যায়, বাড়ির চারটি এসি পুড়ে গেছে। বাড়ির ২২টি ফ্যান আগুনে পুড়ে বাঁকা হয়ে গেছে। একটি ফ্যান খুলে নিচে পড়ে গেছে। দু’টি জেনারেটর ও বাড়ির আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন মুছে দিতে বিক্ষোভ করছেন একদল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মিছিল নিয়ে কয়েকটি আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নওশাদ আলীর বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। গত বুধবার রাত ১২টার দিকে মুখোশ পরা ৪০-৫০ জনের একটি দল বাড়িতে ঢুকে পুরো বাড়ির আসবাবপত্র তছনছ করে। তার বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভাড়রা গ্রামে।
নাটোর প্রতিনিধি জানায়, নাটোর শহরে সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের (শিমুল) জান্নাতি প্যালেসে আবার আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হন। সেখান থেকে মাইক নিয়ে তারা মিছিল করতে করতে কান্দিভিটুয়ায় শফিকুল ইসলামের বাড়িতে যান। পরে তারা বাড়িটির গ্যারেজে থাকা আগের পোড়ানো একটি গাড়িতে আবার আগুন দেন। একই সময় তিনতলা এ বাড়ির বারান্দায় আগুন জ্বালানো হয়। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শফিকুল ইসলামের ওই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত ছিল।
পাবনা প্রতিনিধি জানায়, পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা। এ ছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনা আবাসিক হলের নামফলক এবং সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে দেয়া হয়েছে। গত বুধবার শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল শেষে এই ভাঙচুর চালায়। এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাবনা জেলার আহ্বায়ক বরকতল্লাহ ফাহাদ বলেন, ‘দেশের কোথাও ফ্যাসিবাদের চিহ্ন থাকবে না, ইনশা আল্লাহ। ফ্যাসিবাদের শেষ পরিণতি দেখে কেউ যাতে আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে সাহস না পায়।’
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানায়, ময়মনসিংহ নগরের সার্কিট হাউস মাঠসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার রাতে হাতুড়ি-শাবল নিয়ে ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্যসচিব আলী হোসেন, জেলা কমিটির মুখপাত্র ফয়সাল ফারনিম, মহানগর কমিটির সদস্যসচিব আল নুর মো. আয়াস, মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাফিউস রোহানসহ ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর আবার ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এ অপতৎপরতা দেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। তারই প্রতীকস্বরূপ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের মতো ময়মনসিংহেও স্বৈরাচারের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুরের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে ছাত্র-জনতা। ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু হলের ‘মুজিব ম্যুরাল’।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে পাবলিক টয়লেট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। গত বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদরের স্টেশন রোড এলাকায় দলটির পরিত্যক্ত ভবনের একটি ভাঙা দেয়ালে ‘পাবলিক টয়লেট’ লিখে দিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে শেখ মুজিবের একটি ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গত বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ওই পরিত্যক্ত ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর আগে গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভবনটিতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। ওই সময় থেকে ভবনটির ভাঙা ও ঝুলে থাকা দেয়ালের অংশে গতকাল ‘পাবলিক টয়লেট’ লেখা হয়েছে। পরে ভবনটির সামনে দাঁড়িয়ে এটিকে ‘পাবলিক টয়লেট’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর খড়মপট্টি এলাকায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। গত বছরের ৪ আগস্ট আন্দোলনের সময় ও ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও আওয়ামী লীগের লোকজনের কয়েকটি বাড়ি ও স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা গত বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও নগরের জামালখান এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো একাডেমিক ভবনের সামনে একটু ম্যুরাল ভাঙছেন ২০-২৫ জন। তাদের কয়েকজনের হাতে হাতুড়ি ছিল। অন্যদের হাতে পাথর। স্থানীয় ভাসমান দোকানিরা বলেন, সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ছিল। সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্ররা এসে সেটি ভাঙচুর করেন।
মেডিকেলে ভাঙচুরের পর মশালমিছিলটি নগরের জামালখান এলাকায় যায়। সেখানে দেয়ালে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা। এ সময় তারা সাংবাদিকদের বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থেকে উসকানিমূলক বক্তৃতা দিচ্ছেন। দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। এটির প্রতিবাদে তারা ভাঙচুর করছেন। ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ধ্বংসের যে ষড়যন্ত্র করছে, তা রুখে দিতে ছাত্র-জনতা এখনো প্রস্তুত আছে। তা হতে দেয়া হবে না কোনো অবস্থাতেই।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানায়, কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে। গত বুধবার রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষুব্ধরা পেট্রল ঢেলে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন বলেন, গত বুধবার রাত একটার দিকে কুমিল্লা নগরের মুন্সেফ বাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাহাউদ্দিনের বাড়ির জানালার গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করে বিক্ষুব্ধরা। অনেকে বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর চালা তারা। পরে পেট্রল ঢেলে বাড়ির কয়েকটি কক্ষে এবং ভবনের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এর আগে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ওই বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছিল। রাত দুইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পরও আবার কখনো ভিডিও বার্তা, কখনো অডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার এসব অপতৎপরতা দেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। তাই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর শেষে বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে। সাবেক এমপি বাহার বছরের পর বছর ধরে কুমিল্লার মানুষের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়েছেন। এর আগে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরের রামঘাট এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা মহানগর ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। বিক্ষুব্ধরা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থাকা ইটের গাঁথুনি ভেঙে ফেলে।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরের চাঁনমারী এলাকায় অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে কালো কালিতে ঢেকে দেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে একদল আইনজীবীর উপস্থিতিতে হামার দিয়ে শ্রমিকেরা এই প্রতিকৃতি ভাঙচুর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ভাঙচুরকালে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন এবং সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক সাধারণ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বছরের ২৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছিল বিএনপির সাংস্কৃতিক দল জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা-কর্মীরা। ওই সময় সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স